আধুনিক যুগে সব কিছুরই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাড় করানোর চেষ্টা করা হয়। তবে এমন অনেক ঘটনা ঘটে বিজ্ঞান যার ব্যাখ্যা করতে পারে না। যে ঘটনা কেন্দ্রিক সৃষ্টি হয় রহস্য। এমনই কয়েকটি আওয়াজ মানুষ শুনতে পেয়েছে কিন্তু বিজ্ঞান তার যথাযথ ব্যাখ্যা আজো দিতে পারেনি। রহস্যময় সেসব আওয়াজ নিয়েই আজকের লেখা-
দ্যা হাম
১৯৬০ এর দশক থেকে অদ্ভূত এক আওয়াজ শুনতে থাকে বিশ্ববাসী। অনেকটা ইঞ্জিনের শব্দের ন্যায়। কানাডা, নিউ ম্যাক্সিকো, স্কটল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও শব্দটি শুনতে থাকে মানুষেরা। বিরক্ত হয়ে কানে তুলা দিয়ে রাখলেও ওই আওয়াজ শোনা যেত। পরবর্তীতে অদ্ভূত ওই শব্দের নাম পরিচিতি পায়।
জানা যায়, শতকরা মাত্র দুইভাগ মানুষ হাম শুনতে পেত। সাধারণত বাড়ির অভ্যন্তরে থাকার সময় ও গভীর রাতে হামের আওয়াজ আরো জোরে শোনা যেত। হামের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা কিংবা অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্য দেয়ার চষ্টা করা হয়েছিল। এমনকি পাথরে পরিণত হওয়া হিপ্পিদের কান্না, সরকার কর্তৃক জনগণের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করার কূটকৌশল, মাটির নিচে থাকা ভিনগ্রহবাসীদের ইউএফওর ইঞ্জিনের শব্দ ইত্যাদি বলে ভাবা হয়। এক কথায় বহুমাতৃক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে রহস্যময় এই শব্দের কোনো কূল কিনারা পাওয়া যায়নি।
স্কাইকোয়াক
স্কাইকোয়াক বিশ্বজুড়ে শোনা আরেকটি আওয়াজ। ভারতের গঙ্গা নদী থেকে জাপানের সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে কামান গর্জনের মতো শব্দ শোনা যেত। মূলত সমুদ্র উকূলীয় অঞ্চল থেকে শব্দটি পাওয়া যেত। বিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করলেও শব্দটির মূল রহস্য আজো সমাধান হয়নি।
৫২-হার্জ তিমি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের স্নায়ু যুদ্ধ চলাকালীন ঘটে আরেকটি ঘটনা। মার্কিন নেভি ১৯৮০’র দশকের শেষ দিকে কিছু স্থাপনা তৈরি করে যেখান থেকে সোভিয়েত সাবমেরিনের গতিবিধি লক্ষ্য করা যেত। সোভিয়েত সাবমেরিনগুলো যাতে নিরবে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ সীমানায় প্রবেশ না করতে পারে সেজন্যে সমুদ্রের গভীরের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো হয়। এতে করে মৃদু হতে মৃদুতম শব্দও রাডারে ধরা পড়তো। এর ফলে তারা রাডারে উপকূলীয় অঞ্চলের তিমি মাছদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়।
সাধারণত তিমি মাছ প্রজাতি ভেদে ১০ হার্জ থেকে ৪০ হার্জের মধ্যে শব্দ উৎপাদন করে। আর সাবমেরিনের শব্দের রেঞ্জও এর বেশি ছিলনা। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে ‘বিল ওয়াটকিনস’ নামের এক গবেষক রাডারে অদ্ভুত এক সিগন্যাল ধরেন যার তরঙ্গ কম্পাঙ্ক ছিল ৫২ হার্জ। এই সময় সেখানে সোভিয়েত সাবমেরিন ছিল না, যা থেকে স্পষ্ট হয় জলচর কোনো প্রাণীরই শব্দ। তিনি পরে সিদ্ধন্তে পৌঁছান এটা তিমির শব্দ। তবে তিমির সর্বোচ্চ শব্দ করার শক্তি ৪০ হার্জ। এজন্য গবেষক বিল ওয়াটকিনস আরো কয়েকবার আওয়াজটি ট্র্যাক করেন। প্রতিবারই আওয়াজটি একটি উৎস থেকেই আসছিল। ওই আওয়াজটির ব্যাখ্যা আজো মেলেনি।
আপসুইপ
আপসুইপ একটি অজ্ঞাত রহস্যময় শব্দ। ১৯৯১ সালে মার্কিন একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে প্রথম শনাক্ত করতে পারে। ক্রমাগত ট্রেন চলার মত শব্দ এটি। সমুদ্রতলে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে শব্দটি সৃষ্টি হতে পারে বলে অনেকেই মত দিয়েছিলেন। তবে আপসুইপের শব্দের রহস্য আজো সমাধান হয়নি।
মেমননের কলসি
মিশরের নীল নদের কাছেই লুক্সোর সমাধিক্ষেত্রে দুটি একই রকম বিশাল মূর্তি চোখে পড়ে। ফেরাউন তৃতীয় আমেনহোটেপের মূর্তি এগুলো। স্থানীয়দের ভাষায় যাকে মেমননের কলসি নামে পরিচিত। খ্রিষ্টপূর্ব ২৭ অব্দে ভূমিকম্পে একটি মূর্তি ভেঙে গিয়েছিল। এরপর থেকেই স্থানীয়রা মূর্তিটির কাছ থেকে অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পেত। পরবর্তীতে মূর্তিটি মেরামত করা হলে শব্দটি চলে যায়। এই অদ্ভুত শব্দের রহস্য আজো সমাধান হয়নি।
0 Comments